প্রাকৃতিক রূপচর্চায় আলু হতে পারে একটি ম্যাজিকাল প্রাকৃতিক উপাদান। মাথার চুল থেকে শুরু করে মুখের সেনসেটিভ স্কিন এবং পুরো শরীরের যত্নে আলুর কার্যকরী ব্যবহার সম্পর্কে চলুন জেনে নেই।
ফ্যাশন সতেচন জেনারেশন এর কাছে বর্তমানে রাসায়নিক পণ্য মিশ্রিত বিউটি প্রোডাক্ট এর থেকে প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি হোম মেড স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক রূপচর্চার উপাদান গুলোর মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আলু।
তবে রূপচর্চায় আলুর ব্যবহার কিন্তু শুধু নতুন ট্রেন্ডই নয়, বরং অনেক আগে থেকেই এর ব্যবহার হয়ে আসছে।
ত্বকের যত্নে আলুর ব্যবহার হয়ে আসছে পাঁচ হাজার বছর আগে থেকেই।
প্রাকৃতিক রূপচর্চায় আলু বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। হোম মেড স্কিন কেয়ার রুটিনে রাখতে পারেন আলুর ফেসপ্যাক, প্রতি সপ্তাহে চুলের যত্নে আলুর রস হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং শরীরের যে কোনো অংশের যত্নে এই সহজলভ্য আলু ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই লেখাটি পড়ে যা জানতে পারবেন:
১. আলুর রস মুখে দিলে কি হয়?
২. আলুর রস কিভাবে বের করব?
৩. আলু দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
৪. ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে আলুর ব্যবহার
৫. রুপচর্চায় আলির ১১টি ব্যবহার
৬. চুলের যত্নে আলুর ব্যাবহার
৭. ছেলেদের ত্বকের যত্নে আলু
৮. রুপচর্চাতে আলু ব্যবহার এর সময় সতর্কতা।
আলুর রস মুখে দিলে কী হয়?
আলুর রস ব্যবহারে ত্বক হয়ে উঠবে ভেতর থেকে উজ্জ্বল, থাকবে না কোনো দাগ ছোপ ও বার্ধক্যের ছাপ। মুখের রোদে পোড়া ভাব সারিয়ে তুলতে আলুর থেকে কার্যকরী উপাদান আর হতেই পারে না। তাইতো প্রাকৃতিক রূপচর্চায় আলু একটি কার্যকরী উপাদান।
আলুতে আছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি যা ত্বকের সুস্থতা ধরে রাখে। ফলে ত্বকে ব্রনের সমস্যা দেখা দেয় না এবং ত্বক থাকে দাগছোপহীন। এছাড়াও আলু ত্বকের মরা কোষ দূর করে ত্বককে প্রানবন্ত করতে সাহায্য করে।
আলুতে থাকা পটাশিয়াম ত্বকের বার্ধক্য প্রতিরোধে সাহায্য করে, ত্বকের বলিরেখা দূর করে। এটি ত্বককে আদ্র রাখতে সহায়তা করার পাশাপাশি ত্বকের PH ব্যালেন্স ঠিক রাখে।
ত্বকের যাবতীয় সকল সমস্যা সমাধান করে ত্বককে সুন্দর, প্রানবন্ত করে তুলতে মুখে আলুর রসের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আলুর রস কীভাবে বের করব?
প্রাকৃতিক রূপচর্চায় আলু ব্যবহার করতে চাইলে আমাদের আলুর রস বের করার সঠিক প্রসেস জানতে হবে। বিভিন্ন পদ্ধতিতে আমরা আলুর রস বের করতে পারি।
প্রথমে আলু ভালোভাবে ধুয়ে বালু পরিষ্কার করে ওপরের খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। এরপর আর না ধুলেও চলবে।
একটি গ্রেটারের ছোট পাশ দিয়ে আলুটাকে মিহি করে গ্রেট করে নিতে হবে। গ্রেট করা আলু পরিষ্কার সুতি কাপড়ে নিয়ে চিপড়ে রস বের করে নিতে পারবেন।
তাছাড়া আলু ছোট ছোট টুকরো করে কেটে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে বা শিল পাটায় বেটে আলুর পেস্ট তৈরি করে রস বের করতে পারবেন। আলুর পেস্ট এর সাথে খুব সামান্য পরিমান পানি মিশিয়ে সুতি কাপড়ে নিয়ে চিপড়ে রস বের করতে হবে।
আলু দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়:
প্রাকৃতিক রূপচর্চা যেমন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনই প্রাকৃতিক রূপচর্চায় আলুর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেননা আলুতে আছে প্রচুর পরিমানে এন্টি এক্সিডেন্ট, হায়ালুরোনিক এসিড ও ভিটামিন যা আমাদের ত্বককে ফর্সা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রাকৃতিক রূপচর্চায় আলু ব্যবহার করে আমরা হতে পারি ভেতর থেকে ফর্সা। আলুর পেস্ট দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে মুখে নিয়মিত লাগালে ত্বক ফর্সা হবে।
আলুর রস বের করে তুলোর সাহায্যে মুখে লাগালে এটি টোনারের কাজ করবে। তছাড়া ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও আলুর ব্যবহার হয়ে আসছে।
এই আলুর টুকরো মুখে লাগিয়ে রোদে পোড়া ভাব দূর করা যায়, যার ফলে আমাদের ত্বক হয়ে উঠবে আরও বেশি ফর্সা। এক্ষেত্রে আলুর পেস্টও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
আলুর পাউডার এর সাথে বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে আলুর ফেসপ্যাক, আলু স্ক্রাব, ক্লিনজার তৈরি করে নিয়মিত ব্যবহার করার মাধ্যমে ফর্সা হওয়া সম্ভব।
আলু দিয়ে প্রতি মাসে বা পনেরো দিনে একবার ফেসিয়াল করলে ত্বক হবে ফর্সা ও মসৃণ। সেই সাথে ঘরোয়া রূপচর্চার মাধ্যমে ত্বকের যাবতীয় সমস্যারও সমাধান হবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে আলুর ব্যবহার:
সম্প্রতি এক স্টাডিতে জানা গেছে যে, ২০২৩ সালে এসে বিশ্বজুড়ে ত্বকের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ এবং স্বাস্থ্যের ওপরে মানুষের ফোকাসের পরিবর্তন হচ্ছে। ফ্যাশন সচেতন লোকজন হালকা উপাদানের এমন সব ফর্মুলেশন খুজছে যা ত্বকের মাইক্রোবায়োমকে পুষ্ট করে। (তথ্যসূত্র: দ্য ডেইলি স্টার)
অর্গানিক স্কিন কেয়ার সব সময়ই হালকা উপাদান গুলোর ওপর নির্ভরশীল হয় এবং প্রাকৃতিক উপাদান গুলো ত্বকের কোনো প্রকার ক্ষতি সাধন না করেই ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলে।
প্রাকৃতিক রূপচর্চায় আলু সঠিক উপায়ে ব্যবহার করতে পারলে এটিই হতে পারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর সবথেকে কার্যকরী উপাদান। হোম মেড স্কিন কেয়ার রুটিনে অবশ্যই আলুর তৈরি একটি ফেসপ্যাক বা ক্রিম রাখা উচিত যা ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করতে সহায়তা করবে।
আলু শুধু মুখেরই নয় বরং পুরো শরীরের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তুলতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আলুর রস, পেস্ট বা গুঁড়ো দিয়ে তৈরি বডি প্যাক, হ্যান্ড মাস্ক বা স্ক্রাবার পুরো শরীরের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
রুপচর্চায় আলুর ১১টি ব্যবহার:
চলুন জেনে নেয়া যাক প্রাকৃতিক রূপচর্চায় আলুর ১১ টি ব্যবহার সম্পর্কে। প্রথমেই জেনে নেয়া যাক আলু দিয়ে আমরা কিভাবে ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারি।
রেমিডি- ১
উপাদান –
১. আলু
২. টমেটো
৩. টক দই
তৈরির নিয়ম-
অর্ধেক গ্রেট করা আলুর সাথে অর্ধেক টমেটোর পেস্ট ও দুই চামচ টক দই নিয়ে একসাথে মিক্স করতে হবে। ফেসপ্যাক এর থিকনেস ঠিক রাখতে টক দই এর পরিমাণ কম বেশি নেয়া যেতে পারে।
ব্যবহার-
মুখ ও ঘাড় ভালোভাবে ক্লিন করে ফেসপ্যাকটি পুরো মুখে ও গলায় এপ্লাই করতে হবে। চাইলে হাতে ও পায়েও ব্যবহার করতে পারেন। ২০ মিনিট পরে নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্যাকটি ত্বকের রোদে পোড়া ভাব কমিয়ে ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে তুলবে।
রেমিডি – ২
উপাদান-
১. আলু
২. স্ট্রবেরি

৩. মধু
তৈরির নিয়ম-
অর্ধেক আলু ও ১টা স্ট্রবেরি একসাথে ব্লেন্ডারে বা পাটায় বেটে পেস্ট করে নিতে হবে। এই পেস্ট এর সাথে সাথে ১ চামচ মধু নিয়ে ভালোভাবে মিক্স করতে হবে।
ব্যবহার-
মুখ ও ঘাড় পরিষ্কার করে প্যাকটি পুরো মুখে ও ঘাড়ে এপ্লাই করতে হবে। ২০ মিনিট পরে নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্যাকটি ড্রাই স্কিনের জন্য উপকারী
রেমিডি – ৩
উপাদান-
১. আলু
২. মুলতানি মাটি

৩. গোলাপজল
তৈরির নিয়ম-
এক টেবিল চামচ গ্রেট করা আলুর সাথে এক চামচ মুলতানি মাটি ও চামচ গোলাপজল একসাথে মিশিয়ে প্যাকটি তৈরি করতে হবে।
ব্যবহার-
পরিষ্কার ত্বকে প্যাকটি লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে বেশি শুকিয়ে না যায়, হালকা ভেজা অবস্থাই প্যাকটি ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্যাকটি শুধুমাত্র অয়েলি স্কিনের জন্য।
রেমিডি – ৪
উপাদান-
১. আলু
২. চালের গুঁড়ো
৩. লেবুর রস
৪. মধু
তৈরির নিয়ম-
আলু ব্লেন্ড করে বা গ্রেট করে রস বের করে নিতে হবে। ১ চামচ আলুর রসের সাথে ১ চামচ চালের গুঁড়ো, ১ চামচ লেবুর রস ও ১ চা চামচ মধু নিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করতে হবে।
ব্যবহার-
পরিষ্কার ত্বকে প্যাকটি লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। সব ধরনের ত্বকের জন্যই এটি উপযুক্ত। প্যকটি ত্বকের দাগছোপ কমানোর পাশাপাশি ত্বককে ফর্সা করতে সাহায্য করে।
রেমিডি -৫
উপাদান-
১. আলু
২. ডিম
তৈরির নিয়ম-
২ চামচ আলুর রস আর একটি ডিমের সাদা অংশের অর্ধেকটুকু নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। খুব ভালোভাবে মিক্স করতে হবে যেন কোনও লাম্প না থাকে। এটি ত্বকের পোরস দূর করে ত্বককে টানটান করবে।
ব্যবহার-
মুখ ও গলা পরিষ্কার করে একটি ব্রাশের সাহায্যে প্যাকটি পুরো মুখে ও গলায় এপ্লাই করতে হবে। ১৫ মিনিট পরে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। প্যকটি ত্বকের দাগছোপ কমানোর পাশাপাশি ত্বককে ফর্সা করতে সাহায্য করে।
রেমিডি- ৬
উপাদান-
১. আলু
২. গোলাপ ফুলের পেস্ট বা পাউডার
৩. গোলাপজল
তৈরির নিয়ম-
১ চামচ আলুর পেস্ট এর সাথে এক চামচ গোলাপের পাপড়ির পেস্ট বা হাফ চামচ গোলাপ পাউডার এবং পরিমানমতো গোলাপজল মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করতে হবে।
ব্যবহার –
পরিষ্কার মুখে ও গলায় প্যাকটি লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্যাকটি ত্বককে ফর্সা করতে সবথেকে বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
চলুন এবার দেখে নেয়া যাক কিভাবে বাড়িতে বসেই আলু ব্যবহার করে ফেসিয়াল করা যাবে।
আলু দিয়ে ফেসিয়াল:
উপাদান-
১. আলু
২. লেবুর রস
৩. চালের গুঁড়া
৪. অ্যালোভেরা জেল

৫. যে কোনো একটি আলুর ফেসপ্যাক
ফেসিয়াল করার পদ্ধতি –
আলু দিয়ে ফেসিয়াল করার ক্ষেত্রে চারটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। প্রথমে ক্লিনজিং এর জন্য এক চামচ লেবুর রস ও এক চামচ আলুর রস তুলোর সাহায্যে মুখে এপ্লাই করতে হবে। ১৫ মিনিট পরে ধুয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
এর পর স্ক্রাবিং এর জন্য ১ চামচ আলুর রস, ১ চামচ চালের গুঁড়া এবং ১ চামচ কাঁচা দুধ মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে। ১৫ মিনিট আলতো হাতে স্ক্রাব করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
এরপর ম্যাসাজের জন্য ১ চামচ আলুর রস, ১ চামচ অ্যালোভেরা জেল ও ১ চামচ কাঁচা দুধ নিয়ে ভালোভাবে মিক্স করে ক্রিম তৈরি করে নিতে হবে। ১৫ মিনিট সময় নিয়ে ম্যাসাজ ক্রিমটি মুখে ও গলায় ম্যাসাজ করতে হবে।
চতুর্থ ধাপে উপরে উল্লিখিত যে কোনো একটি ফেসপ্যাক ব্যবহার করলেই পুরো ফেসিয়াল পক্রিকা শেষ হবে এবং আপনি পাবেন ঝকঝকে কোমল ত্বক।
আলুর তৈরি এক্সফোলিয়েটর:
উপাদান –
১. আলু
২. ওটমিল

৩. কাঁচা দুধ
তৈরির নিয়ম-
দুই চামচ আলুর রস, ১ চামচ ওটমিল ও ১ চামচ কাঁচা দুধ একসাথে মিশিয়ে একটি দানাদার মিশ্রণ তৈরি করতে হবে।
ব্যবহার –
মুখ ও গলা পরিষ্কার করে পরিমাণমতো এক্সফোলিয়েট হাতে নিয়ে মুখে ও গলায় ম্যাসাজ করতে হবে। এভাবে আলতো হাতে ১৫ মিনিট খুবই ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি মুখের মৃত কোষ দূর করে ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করবে।
আলুর তৈরি ক্লিনজার:
উপাদান –
১. আলু
২. লেবু
তৈরির নিয়ম-
২ চামচ লেবুর রস ও ২ চামচ আলুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
ব্যবহার –
তুলোর সাহায্যে মিশ্রনটি পুরো মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে।
লেবু ক্লিনজিং এর কাজ করবে সেই সাথে আলু উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে।
আলুর তৈরি স্ক্রাবার :
উপাদান –
১. আলু
২. চালের গুঁড়া

৩. কাঁচা দুধ
তৈরির নিয়ম-
১ চামচ আলুর রস, ১ চামচ চালের গুঁড়া ও ১ চামচ কাঁচা দুধ একসাথে মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করতে হবে।
ব্যবহার –
মিশ্রনটি গলায় ও মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট আলতো হাতে স্ক্রাব করতে হবে।
প্রয়োজনে মাঝে মাঝে নরমাল পানি বা কাঁচা দুধ নিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই হবে।
আলুর তৈরি ময়েশ্চারাইজার :
উপাদান-
১. আলু
২. মধু

তৈরির নিয়ম-
১ চামচ মধুর সাথে ১ চামচ আলুর রস নিয়ে ভালোভাবে মিক্স করে নিতে হবে।
ব্যবহার –
প্রতিবার মুখ ধোয়ার পরে বা ফেসিয়ালের পরে মিশ্রনটি পুরো মুখে লাগিয়ে নিলেই হবে।
একসাথে মধু ময়েশ্চারাইজিং এর কাজ করবে আর আলু ব্রাইটেনিং এর কাজ করবে।
ঘরোয়া রূপচর্চার পাশাপাশি আলুর তৈরি বিভিন্ন অর্গানিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট দিয়েও ত্বকের পরিচর্যা করতে পারেন।
যেমন: ভিটামিন সি পটেটো ক্রিম, আফ্রিকান পটেটো ক্রিম, অর্গানিক পটেটো ফেসপ্যাক, পটেটো সুথিং মাস্ক ইত্যাদি।
চুলের যত্নে আলুর ব্যবহার :
প্রাকৃতিক রূপচর্চায় আলু ব্যবহারের ক্ষেত্রে চুলের যত্নের বিষয়টিও মাথায় রাখা দরকার।
চুলের স্ক্যাল্পে আলুর রস ব্যবহার করলে স্ক্যাপ্লের ক্লিনজিং এর কাজ করবে, চুলপড়া কমবে, চুল লম্বা হবে এবং দেখতে সুন্দর হবে।
আলুর রস সরাসরি চুলের গোড়ায় এপ্লাই করলেই ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
আধাকাপ আলুর রস নিয়ে চুলের গোড়ায় ৫ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করতে হবে।
এরপর পুরো চুলে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেললেই হবে।
ছেলেদের ত্বকের যত্নে আলু:
মেয়েদের ত্বকের পাশাপাশি ছেলেদের ত্বক উজ্জ্বল করতে এবং স্কিনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে আলু কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
উপরে উল্লিখিত যে কোনো ফেসপ্যাক নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক থাকবে সুস্থ ও সুন্দর। তাছাড়া ব্যবহার করতে পারেন ফেস মাস্ক, স্ক্রাবার, ফেসিয়াল প্যাক।
ছেলেদের ক্ষেত্রেও প্রাকৃতিক রূপচর্চায় আলু নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক ফর্সা হওয়া বেশ সহজ।
রূপচর্চাতে আলু ব্যবহারের সময় সতর্কতা :
প্রাকৃতিক রূপচর্চায় আলু ব্যবহারের সময় বেশ কিছুদিকে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে।
১. রূপচর্চায় ব্যবহৃত আলু একদম টাটকা ও ফ্রেশ হওয়া উচিত।
২. আলুর রস বের করে এটি সাথে সাথে ব্যবহার করা উচিত। ফ্রিজে রেখে কখনোই আলুর রস ব্যবহার করা উচিত নয়।
৩. আলুর সাথে ব্যবহৃত যে কোনো উপাদান যদি ত্বকের সাথে না খাপ খায় তবে এটি ত্যাগ করতে হবে।
৪. আলুর রসে কারো এলার্জির সমস্যা থাকলে এই রেমিডি গুলো তাদের জন্য না।
৫. আলুর রস বা অন্যকোনো উপাদান যাতে কোনভাবেই চোখের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
শেষ কথা
প্রাকৃতিক রূপচর্চায় আলু খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। আলুর তৈরি যে কোনো রেমিডি নিয়মিত ব্যবহার করতে থাকলে ত্বক হবে ভেতর থেকে ফর্সা এবং সুন্দর।
সেই সাথে ত্বকের যাবতীয় সমস্যা সমাধান হবে খুব কার্যকরী ভাবে। তবে যে কোনো রেমিডি ধৈর্য ধরে নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে।
প্রতি মাসে একবার ফেসিয়াল করা উচিত এবং কিছুদিন পরপরই স্ক্রাবার ব্যবহার করতে হবে।
ফলে আপনি পাবেন দাগহীন উজ্জ্বল সুন্দর ত্বক।তবে অবশ্যই সতর্কতার বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।
FAQ:
১. আলু কি ত্বকের জন্য ভালো?
হ্যাঁ, আলুতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম ও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ত্বকের জন্য উপকারী। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং বার্ধক্যের ছাপ কমায়।
২. সব ধরনের স্কিনে কি আলু ব্যবহার করা যায়?
কাঁচা আলুতে এলার্জি সমস্যা না থাকলে যে কোনো স্কিনেই আলু ব্যবহার করা যায়।
৩. সপ্তাহে কয়বার আলু ত্বকে ব্যবহার করা উচিত?
চাইলে প্রতিদনই ফেসপ্যাক হিসেবে আলু ব্যবহার করা যাবে।



